Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Title
History of a successful woman
Image
Attachments

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে জীবনসংগ্রামে সফল নারী হিসেবে এ বছর রাজবাড়ী জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন মর্জিনা বেগম। যার জীবন শুরু হয়েছিল একজন যৌনকর্মী হিসেবে। জীবনের প্রতিটি পদে পদে নির্যাতিত হয়ে ঘুরে দাঁড়ানো এ নারী আজ সমাজে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।
আলাপকালে মর্জিনা বেগম জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের আড়ৎপট্টি এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আ. করিম মোল্লার মেয়ে মর্জিনা বেগম। তিন বোনের সংসারে তিনি ছিলেন বড়। ছোট বয়সে বাবাকে হারিয়ে নানাবাড়িতে বড় হন তিনি। ১৩ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালে ফরিদপুরের আ. রব মৃধার সঙ্গে বিয়ে হয় মর্জিনার। স্বামী রাঙামাটিতে ফার্নিচারের ব্যবসার সুবাদে সেখানে নিয়ে যায় তাকে। কিন্তু মাতাল স্বামীর নির্যাতনে ছয় মাসের বেশি সেখানে থাকতে পারেননি মর্জিনা। তার অসহায় জীবনে যুক্ত হয় গর্ভে থাকা কন্যাসন্তান।
১৯৮০ সালের দিকে পিঠা বিক্রি করে চলত মর্জিনার সংসার। এ সময় এক দালালের প্রলোভনে পড়ে মর্জিনার ঠাঁই হয় সিরাজগঞ্জ যৌনপল্লীতে। ১৯৮৮ সালের দিকে চলে আসেন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে। ১৯৯৯ সালে যৌনকর্মীদের জুতা পরা, মারা গেলে দাফনের ব্যবস্থা, শিশুদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার, বিনা অপরাধে অত্যাচার বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আয়োজন করা হয় যৌনকর্মীদের সম্মেলন। যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ে তিনি একাধিকবার জেল-জুলুমের শিকারও হয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি।
মর্জিনা বেগমের সভাপতিত্বে ১৯৯৯ সালে ডিসেম্বর মাসে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন লাভ করে মুক্তি মহিলা সমিতি। এ সমিতির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন সচেতনতামূলক যেমন সম্মেলন, নাটক, এইডস, সঞ্চয়, স্যানিটেশন, মাদক, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভ করে মুক্তি মহিলা সমিতি। ২০০৫ সালে এ সমিতি বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কিংয়ের সদস্য পদ লাভ করে। ২০০৯ সালে এনজিও ব্যুরো থেকে রেজিস্ট্রেশন অর্জন করে মুক্তি মহিলা সমিতি।

 

২০১০ সালে মর্জিনা বেগম যৌনপল্লী ছেড়ে চলে আসেন। কিন্তু থেমে যাননি তিনি তার আন্দোলন থেকে। তার সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দাতাসংস্থার অর্থায়নে যৌনকর্মী ও সেখানকার শিশুদের মানবিক উন্নয়নের কাজ করে চলেছেন। ২০১০ সাল থেকে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ৩৫০ জন শিশুকে নিয়ে এডুকেশন (ইসিডি, ইভিনিং) প্রোগ্রাম সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন, ২০১৫ সালে সরকারের রস্ক প্রোগ্রামের সঙ্গে নন-স্কুলিং শিশুদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তি মহিলা সমিতি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।
স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন_ এশিয়া হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন কর্তৃক কবি নজরুল সম্মাননা পদক, শেরেবাংলা স্বর্ণপদক, স্বাধীনতা সংসদ সম্মাননা পুরস্কার প্রভৃতি। এ ছাড়া এ বছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবসে 'জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ' শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় তিনি রাজবাড়ীতে জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা অর্জন করেন। জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগমের হাতে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. শাহিদা আক্তার, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম খান।